বাংলার উৎসব ( Bengal Festival)

                -:বাংলার উৎসব:-

ভূমিকা : "আমার আনন্দে সবার আনন্দ হউক, আমার সুখে সবাই সুখী হউক, এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ"


বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা বারংবার ঘনিয়েছে। দুর্ভিক্ষ, মহামারী কিম্বা দৈব দুর্বিপাকে বহুবার কন্টকাকীর্ণ জন্য করেছে বাঙ্গালীর জীবনকে । তবুও আমাদের আনন্দঘ্লোতে ভাটা পড়েনি, ম্লান হয়নি বাঙালির উৎসব প্রিয়তা। কারণ বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। বাঙালির "বারাে মাসে তেরাে পার্বণ"।


উৎসবের শ্রেণীবিভাগ : "এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ/তবু রঙ্গে ভরা"- ঈশ্বর গুপ্ত


বাঙালির উৎসবগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় - (ক) ঋতু উৎসব, (খ) ধর্মীয় উৎসব, (গ) সামাজিক-পারিবারিক উৎসব ও (ঘ) জাতীয় উৎসব।


ক) ঋতু উৎসব :- বাংলা ঋতুরঙ্গশালায় বিচিত্র ঋতুরজের আবির্ভাব, বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে বিচিত্র উৎসবের সমাহার। বছরের শুরুতে নানা রকমভাবে নববর্ষ উদযাপন হয়ে। নবান্ন ও সৌষসার্বণ দুটি উৎসব নতুন ফসল কাটার সময় হয়। শীত ঋতুতে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা রকম পিঠেপুলি ও মিষ্টান্ন তৈরি হয়। দোলযাত্রা হয় বসন্ত ঋতুকে কেন্দ্র করে । রঙের উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরােপণ উৎসব, বর্ষামঙ্গল, বসন্ত উৎসব -এর প্রচলন করেন, যা আজ বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।


(খ) ধর্মীয় উৎসব :- নানান ধর্মসম্প্রদায়ের বাস এই বাংলায় । নিজেদের মঙ্গলের জন্য সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে। বাঙালি জাতি নানারকম ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী। তাই ধর্মকেন্দ্রিক নানান উৎসবের আয়ােজন চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে । হিন্দুদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা | এছাড়া কালীপুজা, সরস্বতী পুজা, লক্ষ্মী পুজা, বিশকর্মা পূজার আয়ােজন করা হয়। মুসলমানদের ঈদ, মহরম, শবেবরাত কিংবা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, ইসটার সাটারডে পালিত হয় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে । ধর্ম আলাদা হলেও বাঙালিরা কিন্তু একে অন্যের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে, একে অপরকে শ্তভেচ্ছ বিনিময় করে।

গ) সামাজিক-পারিবারিক উৎসব:- মানুষ সামাজিক জীব। বেশ কিছু উৎসব আছে শ্রেযুলি আমাদের পারিবারিক আনন্দ অথবা দুঃখের অনুভূতিকে সমাজের আর পাঁচজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায় । বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, উপনয়ন, জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটা- এই সকল পরিবারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর মিলনানুষ্ঠানে পরিণত হয়। এই সকল অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক মনােমালিন্য যেমন দূর হয়, তেমনি দূরের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। 

ঘ) :- জাতীয় জীবনে এমন কতগুলি দিল আসে সেই দিনগুলিকে পালন করে আমরা ঋদ্ধ হই, উজ্জীবিত হই, উৎসর্গ মন্ত্র দীক্ষিত হই । আমরা ঘে রাষ্ট্রে বাস করি সেই ভারতবর্ষে বিভিন্ন মনিষীদের জন্মদিবস, যেমন- নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের জন্মদিন, রবীন্দ্রজয়ন্তী, মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন, নজরুলজয়ন্তী, জন্মদিন এবং বিশেষ কিছু দিন মরেমন- স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসও সারা ভারতবাসী তথা বাঙালিরা থাম্ৰোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে থাকে ও

উৎসবে মেতে উঠে।

উপসংহার: নগর সভ্যতার অহংকারে আজ হয়তাে বাংলার উৎসব হয়ে যাচ্ছে বিলুপ্ত। অন্তরের আবেদনকে ছাপিয়ে প্রকট হয়ে উঠছে বাহিক আড়ম্বর। তবুও, যতই কৃত্রিমতা চেপে বসুক না কেন, বাঙালি আজও উৎসবমুখর থাকতেই ভালােবাসে। নতুন প্রজন্ম আজ অনেক হারিয়ে যাওয়া উৎসবকে নতুন করে পালন করছে। কর্মব্যস্ত মানুষ গুলাে আজ উৎসবের টানে দূর থেকে ফিরে আসতে চায় নিজের বাসভূমিতে। তাই দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বাংলায়, অদূর ভবিষ্যতে বাঙালির উৎসব প্রাণের উৎসব হয়ে উঠবে এই প্রত্যয় জাগে।

टिप्पणियाँ

इस ब्लॉग से लोकप्रिय पोस्ट

Madhyamik Geography Map pointing

Madhyamik English to Bengali Suggestion ( বঙ্গানুবাদ)

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন/ Madhyamik Bengali Suggestions ( WBBSE) (ABTA Solved Papers)