মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেসন ২০২১

                       নীল বিদ্রোহ


প্রাক্ কথন: পরাধীন ভারতের ইতিহাসে এক তাৎপর্যময় ঘটনা হলাে 1859-1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ। প্রকৃতপক্ষে এই বিদ্রোহ ছিল নীলকর সাহেবদের শােশন তথা পাশবিক অত্যাচারের विরুদ্ধে দরিদ্র নীল চাষীদের ঐক্যবদ্ধ ব্রিটিশবিরােধী এক সতস্ফুর্ত  গণআন্দোলন। 


নীল বিদ্রোহের কারণ: একাধিক কারণে নীল চাষিরা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।


১. চাষিদের কাছে নীল চাষ ছিল অত্যন্ত অলাভজনক। কৃষকেরা শ্রমের ন্যাযামূলা পেতেন না। তাদের বিশ্ব প্রতি আড়াই টাকা লােকসান হতাে। তাই তারা নীলচাষে অনিচ্ছুক ছিল।


২. নীলকর চাষের জন্য উর্বর জমি বেছে নেওয়ার ফলে, খাদ্যশসেদৱ উৎপাদন কমে যায় এবং চাষীদের খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়।


৩. নীলচাষীদের (বিঘা প্রতি দুই টাকা করে) অগ্রিম অর্থ বা দাদন দিয়ে আজীবন নীলচাষে  বাধ্য করত। দাদন গ্রহণের সময় নিরক্ষর কৃষকদের এমনই প্রতারণামূলক চুক্তিপত্রে সই করানাে হতাে যে, চাষিরা নিজের জমিতে বংশ‌ পরম্পরায়  ভূমিদাসে পরিণত হতাে। 


৪. চাষীদের বাধ্যতামূলক নীল চাষ করানাের জন্য ইংরেজ সরকার 1830 খ্রিস্টাব্দে আইন তৈরি করেন। এই আইন পঞ্চম আইন নামে পরিচিত।


৫. নীলচাষ করতে না চাইলে নীলকর সাহেবেরা নীলচাষীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালাত। চাষীদের নীলকুঠিতে আটকে রেখে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হতাে। তাদের গবাদি পশু ও ফসল কেড়ে নেওয়াহতাে, ধানের গোলায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হতাে, এমনকি চাষীদের স্ত্রী-কন্যাদের ওপরও নির্যাতন চালানাে হতো। 


যদিও চাষিরা প্রথমেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেনি। প্রতিকারের আশায় প্রথমে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেখান থেকে কোন সুফল না পাওয়ায়, তারা বাধ্য হয়েই বিদ্রোহ ঘােষণা করে।


বিদ্রোহের সূচনা:এই অবস্থায় 1859 সালে নদীয়ার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস নামে দুই চাষি নীল চাষ করতে অস্বীকার করেন এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সরব হন। শুরু হয় নীল বিদ্রোহ।


বিস্তার: বিশ্বাস ভাতৃদ্বয়ের হাত ধরে খুব তাড়াতাড়ি এই বিদ্রোহ চৌগাছা গ্রাম ছাড়িয়ে, সমগ্র নদীয়া,  যশাের পাবনা ফরিদপুর রাজশাহী,খুলনা,মালদা,মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর বারাসাত সহ গােটা গােটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার প্র লক্ষ কৃষক এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল।

নেতৃত্ব বর্গ :নীল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন-বিষ্ণুচরন বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, রফিক মন্ডল, কাদের মােল্লা, রামরতন মল্লিক (বাংলার নানাসাহেব) প্রমুখ।


বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য: এই বিস্রোহেন টি বিভিন্ন দিক থেকে বৈশিষ্মতিত যথা -

১. নীল বিদ্রোহ ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ।

২. এই বিদ্রোহ জমিদার বিরােধী ছিল না মূলত নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদ স্বরূপ এই বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। ৩, জমিদারদের একাংশ এই বিদ্রোহে কুষক দেশ সমর্থন করেছিলেন। যথা : চন্ডীপুরের জমিদার শ্রীহরি রায়বিদ্রোহী কৃষকদের পক্ষে ছিলেন।


৪, এই বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ বাংলার হিন্দু মুসলমান কৃষক সম্প্রদায় একত্রে এই বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল । 


৫. বিদ্রোহী কৃষকরা নীলকুঠি আক্রমণ করে লুট ও অগ্নিসংযােগের মাধ্যমে এই বিস্রোহকে হিংসার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।


৬.শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট এর সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় তাঁর পত্রিকাতে নীল চাষীদের পক্ষে এবং নীলসাহেবদের  বিরুদ্ধে জোরালাে খবর প্রকাশ করতেন। 


ফলাফল ও গুরুত্ব :- বিদ্রোহের তীব্রতার কাছে নীলকররা মাথা নােয়াতে বাধ্য হয়। প্রকৃতকে এই বিদ্রোহের প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। যথা -

১.এই বিদ্রোহ প্রমাণ করে যে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে স্বৈরাচার মাথা নােয়াতে বাধ্য- যা পরাধীন ভারতবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসাহিত করে।

২. নীলবিস্নোহের তীব্রতায় সরকার বাধ্য হয়ে, নীল কমিশন গঠন করে (1৪60 খ্রিস্টাব্দ )।


৩. কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নীল চুক্তি আইন রদ করে নীলচাষকে চাষীদের ইচ্ছাধীন ঘােষণা করা হয়। অনেকের মতে, নীল ধর্মঘটই ছিল ভারতবর্ষের বুকে প্রথম ধর্মঘট। 


শেষ কথা: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা তথা ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ ছিল একটি সঙ্গবদ্ধ স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন। প্রকৃতপক্ষে পরাধীন ভারতের মাটিতে নীল বিদ্রোহ জাতীয় আন্দোলনের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। যা পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামী সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের ঘূণ্য শাসন ও শােষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিল। 

टिप्पणियाँ

इस ब्लॉग से लोकप्रिय पोस्ट

Madhyamik Geography Map pointing

Madhyamik English to Bengali Suggestion ( বঙ্গানুবাদ)

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন/ Madhyamik Bengali Suggestions ( WBBSE) (ABTA Solved Papers)